ভবিষ্যতের কোনো একদিন
[ ভবিষ্যতের কোনো একদিন,গুরুচন্ডালের গৌরচন্দ্রিকা , ডা. মোশতাক আহমদ ]
হাঁনাহানিময় বিশ্ব তখন আর নাই। পঞ্চম বিশ্বযুদ্ধ হইয়া গিয়াছে এবং তাহার পর জীবিত যাহারা ছিলেন অতি উন্নত চিন্তার অধিকারী বিধায় এই গ্রহের বিভিন্ন ভাষাভাষির জীবিত সকল মনুষ্যকূল কর্তৃক একটি কনফেডারেশন গঠন করা হইলো । যুদ্ধ চিরকালের জন্যে বন্ধ এবং শাস্তি প্রতিষ্ঠিত করা হইবে, এইরূপ ব্রত নিয়া গ্রহটি চালাইতে লাগিলেন।
অনেক শান্তি সমৃদ্ধি আসিলো। জ্ঞান-বিজ্ঞান আমাদের এখনকার বুদ্ধিবিচারে ধরে না, এমনকি কল্পনাতেও আসে না সেই রূপ উন্নত হইলো । কতো ছোট ছোট কিন্তু শক্তিশালী যন্ত্র আবিষ্কার হইলো । যাহাদের মধ্যে তথ্য জানিবার জন্যে যে কোনো জিনিসের মাইক্রো অংশ প্রবেশ করাইয়া শুধু মৌখিক নির্দেশনা দিলেও উহা পৃথিবীর সৃষ্টিকাল হইতে তৎকাল অবধি সমস্ত প্রকার তথ্য উপান্তের বিশ্লেষণের ভিত্তিতে দশমিকের পর এক কোটি শূন্য তাহার পরে এক এইরূপ নির্ভুলতায় উত্তর দিতে সক্ষম ।
যাহারা এখনো বুঝেন নাই, তাহাদের জন্যে আরো একটু সহজে বলি; ইহা ভবিষ্যতের মানব জীবনের এইরূপ এক সময় যখন জ্ঞান-বিজ্ঞান গতি প্রগতি সকল আঙ্গিকে শুধু সুখ আর সুখ । ড. মুহম্মদ ইউনুস কল্পিত দারিদ্র তখন একেবারেই অচেনা বস্তু । বাংলা এলাকা হইতে আমেরিকা যাইতে লাগে পাঁচ মাইক্রো সেকেন্ড । স্কুলের বাচ্চারা পিকনিকে যায় শত আলোকবর্ষ দূরে। এখনো হয়তো অনেকে মালুম করিতে পারেন নাই । আচ্ছা আমার মতো ভোজন রসিক এবং নিতাস্ত পেটুক জনের জন্যে একখানি উদাহরণ দিয়া বুঝাই । ধরুন, বন্ধু-বান্ধব সহযোগে বসিয়া আড্ডা দিতেছেন
গুয়াতেমালার পাহাড়ের উপর কোথাও বসিয়া, হঠাৎ মনে হইলো একটু খানাপিনা করা দরকার । কোথাও যাইবার প্রয়োজন নাই । যোগাযোগ যন্ত্রটি তুলিয়া ফ্রান্সের বিখ্যাত রেস্তোরায় সংযোগ ঘটাইবা মাত্র উহারা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আপনাদের অবস্থান চুলচেরা ভাবে জানিয়া গিয়াছেন।
এইবার অর্ডার দিলেন মেক্সিকো হইতে চেরি টমেটো ও মরিচ আনিয়া উহার সহিত হিমালয় পর্বত গাত্র হইতে সদ্য তোলা পুদিনাপাতার স্যুপ । জাপানের সাগরের তিনশত মিটার নীচের এক কিলো সাইজের লবস্টার, রোজমেরি একটু বেশি দিয়া রান্না হইবে । কোবে বিফ তবে পিইনের পায়ের উপরের ডানের দেড়কিলো গোস্ত। নিতান্তই ঢাকাইয়া শিক কাবাব হইবে । সালাদের জন্যে স্যালেরি ও জুকিনি তাহারা ইচ্ছামতো বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত হইতে আনিতে পারে।
যখন অর্ডার হইতেছিলো তখনই চারজন প্যারাট্রুপার এবং পাচজন স্কুবা ডাইভার যথাক্রমে হিমালয় ও জাপান সাগরে নামিয়া গিয়াছে, উদ্দিষ্ট বস্তুর সন্ধানে। অর্ডার দিয়া একখানি সিগারেট অর্ধেক টানিতেই খাবার হাজির। এর বেশি বর্ণনা আমার মস্তিষ্ক দিতে অক্ষম । যাহারা সেই উন্নত সময় অনুধাবন করিতে পারিয়াছেন এইবারে তাহারা শুনুন । গুরুত্বপূর্ণ সভা ডাকা হইয়াছে। তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীকুল জড় হইয়াছেন। বিষয়, একবিং শতাব্দীর ঢাকা অঞ্চলের পরিত্যক্ত এক জায়গায় একদল প্রত্নতাত্বিক খনন চালাইতে গিয়া বেশুমার লাশ প্রায় অক্ষত তাজা অব
স্থায় পাইয়াছেন। এ যাবতকালে ইহাই প্রথম । বিজ্ঞানে ইহা অসম্ভব আর্কাইভে রাখা জ্ঞান বলে; এককালে নবী রাসুল অথবা সাহাবাগণ কিংবা শহীদগণের লাশ এইরূপ অবিকৃত থাকিবার কথা লেখা আছে। কিন্তু এই অঞ্চলে উনাদের এতো অধিক ঈংখ্যায় থাকিবার বিন্দুমাত্র ইতিহাস নাই । প্রধান বিজ্ঞানী নির্দেশ দিলেন, আহা এতো অধীর হওয়ার কী আছে, স্ক্যানারে দাও এখনি জানা যাইবে সব। রেজাল্ট আসিলো, সকলে হতবাক! এই অজ্ঞাতনামারা সকলে জীবদশায় অধিক ফরমালিন পান করিবার কারণে পচেন নাই। এইবার বিজ্ঞানসভা তড়িৎ
“একবিংশ শতাব্দীর ঢাকা তথা বঙ্গ অঞ্চল ফরমালিনে আসক্ত কেন ছিলোএকটি সমীক্ষা”, এই মর্মে একখানি নতুন প্রজেক্ট হস্তে লইলো।