ফতোয়া

[ সাচ্চা মুসলমান, প্রকৃত জ্ঞানী ধার্মিকগণ এই লিখাটির আওতামুক্ত । আর মুক্ত মন কিংবা চিস্তার অধিকারী না হইলে এই লিখাটি পড়িবার চিস্তাও করিবেন না ]
 



{ ফতোয়া , গুরুচন্ডালের গৌরচন্দ্রিকা , ডা. মোশতাক আহমদ }
আমাদের গ্রাম বাংলা তো বটেই এমনকি শহরসমূহেও কোথাও কোথাও একই অবস্থা বিরাজমান । দেশের লাখ লাখ মাদ্রাসা হইতে বাহির হইয়া আসা হুজুরগণের বিশাল অংশের লক্ষ্য থাকে, পাড়ায় মহল্লায় গড়িয়া ওঠা শত সহস্র মসজিদ সমূহের মুয়াজ্জিন এবং অতঃপর ঈমাম সাহেব হওয়া । 

ইহাদের মধ্যে যাহারা আবার অতিশয় বাকপটু তাহারা শীতকালে পাড়া মহল্লার রাস্তা আটকাইয়া সন্ধ্যা হইতে সুবেহ সাদিক পর্যন্ত ওয়াজ করিয়া মোটা অঙ্কের অর্থ কামাইয়া থাকেন । মাইকের বাহারে আপনি চান আর না চান শুনিতে হইবেই। এই সকল ওয়াজের আরো একটা বড় কারণ, টাকা কালেকশন-_ সেটা যে কিছুর নামেই হোক । যে হুজুর মানুষের আবেগে নাড়া দিয়া যতো আদায় করিতে পারিবে তাহার তত বেশি কদর। 

আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ভাগিনা বড় ওয়ায়েজ। তাহার সচিব ডায়েরিতে 

শিডিউল মেইন্টেন করিয়া থাকে । নিজস্ব এলিওন গাড়ি। থাক, যাহা বলিতেছিলাম--গত রাতে বাসার সন্নিকটে এইরূপ ওয়াজের আওয়াজের মধ্যেই ক্লোনাজিপামের সহায়তায় নিদ্রা গেলাম । হায়! রাত্রি সাড়ে ৪ ঘটিকার 

' দিকে জোশের চূড়ান্তে উঠিয়া যাওয়া হুজুরের বিকট চিৎকার-_“খামোশ যারা **. যারা এখন সভাস্থল ত্যাগ করিবেন, তাহারা খবিশের আওলাদ, পেশাব ধরিলেও যাইবেন না, হে মর্দে মমিন আপনাদের বলা হচ্ছে কে কতো দান করিবেন তার ওয়াদা দিতে আর এখন যদি ওঠেন সেটা হবে শয়তানের পাবন্দি করা” । 

আমি ধড়মড় করিয়া বিছানার উঠিয়া বসিলাম । অতঃপর শয়তানের পাবন্দি কিনা জানি না, তবে মুত্র বিয়োজন করিতে গেলাম । আমাদের নিকট প্রকৃত ধর্মভীরু আলেমগণ অবশ্যই সম্মানের পাত্র । তবে প্রকৃত ধর্মভীরু কিনা তাহা আমরা কয়জনে চিনি, আম ভাবে আমরা ওনাদের লেবাস দেখিয়াই সম্মান করি । সত্যই যদি কাহারো অন্তর ধর্মের আলোয় উদ্ভাসিত হয় তাহা হইলে আল্লাহ ব্যতীত আর কাহারো নির্দেশ উনাদের মানিবার কথা নয় ৷ 

আজ আমি তাহাদের কথা বলিব, যাহারা লেবাসে হুজুর বটে কিন্ত হুজুরি কলবের অধিকারী নহেন । যাহাদের চক্ষু সমাজের বিত্তশালীদের দেখিলে হীরার টুকরার ন্যায় চমকিয়া ওঠে, উনাদের স্বার্থে ধর্মের ব্যাখ্যা যে কোনো ভাবে দিতে সদা হস্তে প্রস্তুত । গ্রাম বাংলায় প্রায়শই কোনো নারীকে কবজা করিতে না পারিলে তাহার চরিত্রে কালিমা লেপিয়া ধর্মের নামে ফতোয়ার আয়োজন করা হয় । সেই আসরে ধর্মের দোহাই দিয়া শাস্তি দিতে ওই পথভ্রষ্ট হুজুরগণই মধ্যমণি । এইসব আসরে উনাদের ত্বকের চিকনাই বাড়িয়া যায়, অভিযুক্তার দিকে ইনাদের দৃষ্টি ঘন ঘন এইরুপ ঘুরিয়া আসে যে, "ঘ্রাণেই অর্থ ভোজন"  ( এই ক্ষেত্রে কী হইবে তাহা আপনাদের মগজের উপর ছাড়িয়া দিলাম ) । অতঃপর জুতা / দোররা / জরিমানা । 

আমাদের গ্রামের মসজিদে একদা খুতবা পূর্ব বয়ানকালে এইরূপ এক হুজুরের  বয়ান কানে আসিল,  বিষয় জাহাই ছিলো ঘুরিয়া ফিরিয়া বর্তমান জমানায় ইবলিশের ওয়াস ওয়াসায় আসিয়া ঠেকিতেছিলো । আর অবধারিত ভাবে এই বর্ণনায় বেপর্দা নারীগণ, তাহাদের পোশাকের বর্ণনা কম বরং কোন কোন অঙ্গ কতোটুকু কীভাবে দেখা যায়, তাহাই বেশি । ইহার সহিত যুক্ত হইলো টিভিতে নায়িকাগণের নাচের বিভিন্ন মুদ্রার লাইভ কমেন্ট্র... পারিলাম না । আমি অধম অতি ইতর অবশেষে মহা ক্ষেপীয়া মহান হুজুরের ঘয়ান বন্ধ করিতে গর্জন করিয়া উঠিলাম । শুধু তাহাই নহে, এমনই রাগিয়া গেলাম যে উহাকে ক্ষমা প্রার্থনা করাইয়া ওজু করিয়া আসিতে বাধ্য করিলাম । আপনারা হয়তো ভাবিতেছেন নিতান্তই শুল-তাপ্পি... আমার তো হাড়মাংস হালিম হইয়া যাইবার কথা । জনাব, জ্বী না, উক্তমক্তবের ব্যয়ভার বেশিরভাগ আমাদের পরিবার কর্তৃক বহন করা হইয়া থাকে এবং উনিও ক্ষমতার নিকট নত হওয়া লাউডগা মেরুদণ্ডধারী বিধায় আমি বহাল তবিয়তেই আছি। 

এই জাতীয়গণ প্রথম যখন চাকুরি নিতে আসেন, তাহাদের কোটরাগত চক্ষু, গর্ত গাল, হাড্ডি হ্যাঙ্গারে ঝুল পাজ্জাবী, দেখিলে মায়া লাগে । গ্রামে যাহা : হয় প্রতি বাড়ির ভাগে এক/দুইমাসে একবার তাহাদিগকে খানা পরিবেশনের ভার পড়ে, সবাই সানন্দে কাজটি করেন। সুতরাং যেই দিন যিনি দেন... মোরগ মুসাল্লাম, গরু, খাসি, খিচুড়ি, পোলাও, পায়েস। মাত্র এক মাসের মাথায় সেই চিকন হুজুরের চিকনাই এতোটাই বাড়িয়া যায় যে ঘাড়ে গর্দানে তাহারা এক একটি আফরিকান মাগুরে পরিণত হন। কমসে কম আধা মাইল 

দূর হইতে তাহাদের নোয়াপাতি ভুঁড়িখানা দেখা যাইবেই যাইবে। 

ইহারা এতোটাই সুযোগ সন্ধানী ও চশমখোর যে নিজেদের দেয়া ফতোয়া নিজেদের বিপক্ষে যাইতে দেখিলে উপস্থিত বৃদ্ধির জোরে কথা ঘুরাইতে উস্তাদ

যেমন একটি গল্প বলি, এক মাতবরের পুত্রকে পশ্চিম দিকে বসিয়া মূত্র বিয়োজন করিবার সময় হাতে নাতে ধরিয়া হুজুর সমীপে আনা হইলো । বিচারে উদ্যত হইবার সময় মাতবরের রক্তচক্ষু দেখিয়া হুজুর বলিলেন, বালকটির সহিত আমি একান্তে কথা বলিয়া লই অতঃপর শাস্তি দিব। খানিক পর হুজুর উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে বলিলেন, হ্যা অবশ্যই পশ্চিম দিকে ফিরিয়া প্রাকৃতিক কর্ম করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, ইহা আমি বলিয়াছি। কিন্তু একান্ত আলাপে জানিলাম, বালকটি পশ্চিম দিকে ফিরিয়া বসিয়াছিলো বটে কিন্তু শাস্তি র কথা মনে পড়ায় সাথে সাথে সে যন্ত্রখানা উত্তরমুখী করিয়া দেয় আসলে সে উত্তরের পানেই মূত্র ত্যাগ করিয়াছে সুতরাং ইহা শাস্তিযোগ্য নহে” । এই বলিয়া মাতবরের দিকে চোখ টিপিয়া তাকাইলেন। 

যাহা হউক, ইহারা সাপের চাহিতে ভয়ংকর এনাকোন্ডা বিশেষ । আইন করিয়াও কিছু হইতেছে না-সামাজিক প্রতিরোধ দরকার ৷ সকলে মিলিয়া যদি রুখিয়া না দাড়াই তাহা হইলে অনাদিকাল হইতে ইত্তেফাকের ৩য় পাতায় “পাশবিক' নামে যে কলাম ছাপা হয় উহা ছাপা হইতেই থাকিবে; কোনো কালেই বন্ধ হইবে না।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url