আতেল সমাচার , গুরুচন্ডালের গৌরচন্দ্রিকা , ডা. মোশতাক আহমদ
সতর্কীকরণঃ কতিপয় সৎ, দেশপ্রেমিক প্রকৃতজনের ক্ষেত্রে লেখাটি প্রযোজ্য নহো
আতেল! এই শব্দটি গালি না বুলি, ইহা লইয়া অবচেতন মনে অনেকদিন ধরিয়া পাচমিশালী প্রকৃতির খিচুড়ি পাকাইতেছিলো। ডাল আর গলে না বিধায় আজিকে উহা চেতন মনে বাহির হইয়া আসিলো। শব্দটি যদি ভাল অর্থে ধরা হয় তবে ইতিহাসের পাতায় পাতায় অনেক উদাহরণ-_সক্রেটিস, এরিস্টটল, প্লেটো, গ্যালিলিও ইত্যাদি, থামা মুশকিল । তাহারা যাহা বিশ্বাস করিতেন তাহাই বলিতেন যুক্তি সহকারে, একচুল মত না বদলানোয় রাষ্ট্র যন্ত্রের হাতে তাহাদের কেহ কেহ প্রাণ দিয়াছেন অবলীলায়। তাই আজ উনারা মানব-সভ্যতার ইতিহাসের গর্বিত অংশ বটে। আমাদের বর্তমান সমাজে খোলনলিচা বদলানো আতেল দাবিদার কতিপয়ের প্রাবল্য ও আধিক্য দুইই লক্ষ্য করা যাইতেছে। বিবর্তনবাদ মাথায় রাখিয়া ইহাদের দিকে তাকাইলে উল্টা স্রোতের আভাষ পাইতে পারেন (বানর হইতে মানব নহে, মানব হইতে বানর)। সারা বাংলায় ইহারা ছাইয়া আছেন।
মোটের উপর ইহারা দুই প্রকার
1. আতেলে আম :
ইহারা নিম্শ্রেণীর, সারা বাংলায় বিদ্যমান । চায়ের স্টল হইতে চলন্ত বাস, ট্রেন, লঞ্চ, রেস্তোরা অর্থাৎ জনপদের জনবহুল স্থানে বিচরণ । আশেপাশে দুই চারিজন থাকিলেই ইহাদের জবানের তালা খুলিয়া যায়, বিষয় কোনো বিষয়ই নহে চরম বার্ধক্যে স্নায়ুরোগীর হঠাৎ শুরু হওয়া শারীরিক কম্পন থামানোর মতোই ইহাদের থামানো প্রায় অসম্ভব ।
2. আতেলে খাস :
ইহারা স্পেশাল । প্রাপ্তিস্থান হইলো বিশেষ দিনে রমনা বটমুল, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গন, পাবলিক লাইব্রেরি চত্র, আর নিত্য বিচরণ শাহবাগ আজিজ মার্কেট এবং আমাদের সকলের বাসায় টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ।
ইহারা আবার দুই প্রকার
1. তরুণ আতেলে খাস :
ইহাদের হাতে বালা, গলায় মালা, স্কন্ধে ঝোলা, ঝাকানাকা চুল দাড়ি, পরনে জিন্স টি শার্ট (সর্বশেষ কবে যে পরিধেয় বস্ত্র ধৌত হইয়াছিলো ইহা লইয়া নৃ-তত্ত্ব বিভাগের এম ফিল পর্যায়ে গবেষণা চলিতে পারে)। ইহারা সাধারণত উঠতি বা উঠন্ত কিংবা উঠিতে গিয়া মহা পড়ন্ত লেখক, কবি, নাট্যকার, নাট্য পরিচালক শ্রেণী ও গোত্রের । যাহারা বাংলা ইচড়ে পাকা অর্থটি কোনোদিন বুঝেন নাই-উনারা ইহাদের দেখিলে অর্থটি কিঞ্িৎ মালুম করিতে পারিবেন ।
2. নিবীর্য আতেলে খাস :
ইহারা প্রায় ষাট ছুঁই ছুই বা অবঃ শ্রেণীর, হয় আমলা নয় প্রশ্রবিদ্ধ রাজনীতিক, নয় গায়ে মানে না আপনি মোড়ল ধাচের নানা পেশার। ইহাদের মধ্যে “আমিও হতে পাত্তেম কিন্তু” জাতীয় প্রাবল্য অধিক প্রকট । কথা বলিতে বলিতে মাঝে মধ্যে দুই চারিটি ইংরাজি শব্দ বা বাক্য এমনভাবে ঢুকাইয়া দেন যে, আপনার মনে হইবে ইনি বোধহয় শেক্সপীয়ারের খালাত ভাই। কিন্তু ইংরাজি মাধ্যমের প্রাথমিক শ্রেণীতে পড়ুয়াগণও উহা শুনিয়া ফোকলা দাতের পুরাটাই দেখাইয়া দিবে।
গ্রাম বাংলায় বাশ ঝাড়ে কচি বাশের গায়ে যে শাখার উদ্ভব হয় উহাকে কাচা জিংলা বলা হইয়া থাকে । উহা দ্বারা সপাং করিলে পশ্চাৎ দেশের খানিক চামড়া না লইয়া উহা ফিরিয়া আসে না । মাঝে মধ্যে এই সকল আতেল বর্গকে এরূপ বেতাইবার দুর্দমনীয় ইচ্চাকে নীরবে গলা টিপীয়া হত্যা করিতে হয়।
mamun
okk boss