মঘা কাহিনী , গুরুচন্ডালের গৌরচন্দ্রিকা , ডা. মোশতাক আহমদ



অদ্য সকালে কর্মস্থলে যাইবার কালে বাসটি যখন ফার্মগেটে আসিয়া খানিক 
দাড়াইল,

মুহূর্তকালের মধ্যেই কালো বোরখা পরিহিত এক রমণী হাতের একতাড়া কাগজ হইতে গবাক্ষের পর গবাক্ষ দিয়া দক্ষ প্লেয়িং কার্ড সাফলকারীর মতো কাগজ বিলাইয়া তড়িৎ পাশের বাসের গবাক্ষে হানা দিতে চলিয়া গেলো। 

পূর্ব অভিজ্ঞতায় জানি উহাতে কি লিখা থাকে । তবুও আজ কি মনে করিয়া হাতে লইলাম। চারিদিকে ইতিউতি তাকাইয়া দেখি কেহবা পায়ের উপর পড়িয়া থাকা কাগজটি এমনভাবে ধরিয়া গবাক্ষ দিয়া ফেলিয়া দিলো যেন উহা শুষ্ক হইয়া যাওয়া কোনো পক্ষীবিষ্ঠা বিশেষ । মহিলা যাত্রীর পাশে বসা কেহ বা কামরাঙ্গা হইয়া গেলেন আর কেহ বা লাজ শরমের বালাইকে গলা টিপিয়া দাত কেলাইয়া খ্যাক খ্যাক করিয়া হাসিতে হাসিতে উহা পড়িতে লাগিলেন । পরে, বাস হইতে নামিয়া হাতে লইয়া দেখিলাম যাহা ভাবিয়াছি তাহাই, মঘা ইউনানী জাতীয় বিজ্ঞাপন ইহাতে সর্বশেষ চিকিৎসা মোক্ষম দাওয়াই অন্তত মরিবার পূর্বে একবার চেষ্টা করিয়া দেখিবার উত্তেজক আকুতি । 

উহাদের দক্ষতার মধ্যে পাইলস-অশ্ব-ভগন্দর-জন্ডিস আরো কতো কি, তবে লাল কালি দ্বারা সুরঞ্জিত দুইটি বিষয় রহিয়াছে; এক ভগ্ন স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধার কিংবা বরাবর যাহাদের চিকন শরীর তাহাতে চিকনাই আনিয়া, কমসে কম ৮০ হাজার টাকা মূল্যমানের কোরবানির গরুর কাছাকছি মোটা তাজা করিবার অব্যর্থ আহ্বান। দুই. ইহা সকলেই জানেন শরমের ব্যাপার কিন্ত দরকার আছে জাতীয় অর্থাৎ কিনা বৈবাহিক জীবনে সুখের স্যান্ডি প্রবাহিত করিবার গ্যারান্টি বিশেষ । 

চিন্তার বিষয় হইলো, এই লইয়া বিস্তর লেখালেখি হইলেও প্রথমে কিছুদিন পুলিশি তৎপরতার পর কোনো এক জাদুর বাঁশির টানে পুলিশ সাংবাদিক সকলেই নিশ্চুপ হইয়া যায় আর মঘাগণ আরো ঘোরতর মঘা হইবার জন্যে ওই সকল জায়গায় ভিড় করেন। এই রাজধানী ঢাকা শহরেই অনেক উদাহরণ আছে, ফার্মেসিতে বসিয়া প্যাড ছাপাইয়া তাহাতে A হইতে Z পর্যন্ত অনেক ডিগ্রী লেখা থাকিলেও MBBS নাই । এমনকি মাধ্যমিকের দুয়ারে মাথা কুটিয়া যাহারা উহা পার হইতে পারেন নাই আজ তেনারা সফল প্রাইভেট প্যাকটিশনার । সকলেই দেখেন কিন্ত কাহারো মাথা ব্যথায় ওষুধ লাগিয়াছে এমত শুনি নাই ।

কথাগুলি আজিকে এ কারণেই বলিতে সাধ হইলো যে, BMA ইলেকশন লইয়া সকলের যে মাতামাতি দেখিতেছি তাহাদের প্রতি বিনম্র অনুরোধ, তদবিরে তকদির এই মুলমন্ত্রের BMA না হইয়া উহা যেন উপরোক্ত অনাচার দুরাচার হইতে জনতাকে বাচানোর তাগিদে হয় এবং একই সাথে সঠিক যুগোপযোগী চিকিৎসা নীতি, বঙ্গীয় ডাক্তার সমাজের স্বার্থ সংরক্ষণে ব্রতী হয়। আসুন এই জন্যে চাপ সৃষ্টি করি। ইহা অরণ্যেরোদন হইবে জানিয়াও কে বলিতে পারে যে, আমাদের অশ্রুতে ভিজিয়া এই মরুতে প্রাণ 

 একদিন মরুদ্যান কেহ না কেহ দেখিতেও পারেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url